গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় - বিস্তারিত জানুন
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় এই ভাবনাটা মাথায় রেখে শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। অত্যধিক শারীরিক ও মানসিক ভাবে যত্নও নিতে হবে। শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ ও শারীরিক কাঠামোর জন্য পুষ্টিকর খাবার এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।
পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়
- গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়
- গর্ভাবস্থায় খাবারের তালিকা
- গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ও খনিজ জাতীয় খাবার
- গর্ভাবস্থায় যে খাবার না খাওয়া উচিত
- গর্ভবতী মায়ের খাবারের পরিচর্যা
- গর্ভাবস্থায় খাবারের পরিমাণ
- গর্ভাবস্থায় সন্তান কোন মাসে কতটুকু বড় হয়
- সন্তান বুদ্ধিমান হতে হলে করনীয়
- গর্ভাবস্থায় শিশুর মেধাবিকাশে মায়ের যত্ন
- শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়
গর্ভাবস্থায় একজন মা'এর সবসময় সুস্থ চিন্তা এবং খাবারের উপর যত্নশীল হতে হবে । এর ফলে সন্তান মেধাবী বুদ্ধিমান ও সুস্থ হিসেবে পৃথিবীতে আসার সুযোগ পাবে। সন্তান ধারণের কথা চিন্তা করার পূর্ব থেকে খাবার নিয়ে ভাবা উচিত। কোন খাবারগুলো খেলে আপনার বাচ্চার ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট অর্থাৎ আই ইউ বাড়তে থাকবে সে খাবার গুলো আপনি বেশি খাবেন। শুধু তাই নয় সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেও সেই খাবারগুলো চালিয়ে যেতে হবে । যে খাবারগুলো খেলে গর্ভাবস্থায় আপনার সন্তান বুদ্ধিমান ও মেধাবী হবে তা হল প্রোটিন জাতীয় খাবার শিশুর বুদ্ধি বিকাশে অনেক কাজ করে।
স্যালমন, টুনা, ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড ও ম্যাকারোল সমৃদ্ধ যে খাবারগুলো আছে সেই খাবার গুলো বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুব বড় ভূমিকা রাখে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য ডিম খাওয়া উচিত কারণ ডিমে কলিনের প্রোপ্যজনের অনেকটা পাওয়া যায়। তাই প্রতিটি গর্ভবতী মাকে দিনে অন্তত দুটো করে ডিম খাওয়া দরকার। এতে করে একজন সন্তান সম্ভাব্যময়ী মা' এর ওজন সন্তান জন্মের সময় বাড়বে কারণ ডিমে থাকে প্রোটিন ও লোহা। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরের ভেতরে সন্তানের স্নায়ু কোষ গুলো যখন গঠন হয় তখন আপনার শরীরে প্রচুর পরিশ্রম হয়। আর এই পরিশ্রমের জন্য বাড়তি কিছু প্রোটিন প্রয়োজন আর সেটি আছে দই - এ।
আয়রন জাতীয় খাবার ও শিশুকে মজবুত শক্তিশালী করে এবং বুদ্ধি বিকাশে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় আরো যে খাবারগুলো আছে তা হচ্ছে বেরি ফল। বেরি ফল হচ্ছে টমেটো ও রেড বিন্স। এ জাতীয় খাবারে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। এই খাবারগুলো আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের টিস্যুকে রক্ষা করে এবং মেধাবিকাশে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি বাচ্চার মস্তিষ্ক সবল করে এবং শক্তিশালী করে তাই আপনি গর্ভাবস্থায় ডিম , চিজ , বিফ এই জাতীয় খাবার গুলো বেশি খাবেন। আয়োডিনের ঘাটতি থাকলে শিশুর আইকিউ কমে যেতে পারে তাই গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে আয়োডিন জাতীয় খাবার খাবেন। সবুজ শাকসবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণ ফলিক এসিড।
গর্ভাবস্থায় খাবারের তালিকা
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় একজন সন্তান সম্ভাবময়ী মা তার অনাগত সন্তান নিয়ে অনেক উৎসাহ উদ্দীপনের মধ্যে দিয়ে দিন কাটান। সব সময় মনে হয় কোন জাতীয় খাবার খেলে আমার সন্তান সুস্থ সুন্দর এবং মেধাবী হবে। তবে জীবনের প্রতিটি সময় গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকর জাতীয় খাবার খাওয়া। কিন্তু গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া একটু বেশি জরুরী। গর্ভকালীন অবস্থায় সন্তান ধীরে ধীরে যখন বড় হয় তখন একটি পুষ্টিকর খাবার তালিকা নিশ্চিত করা খুব জরুরী।পালং শাক , ডাল - এ জাতীয় খাবার গুলোর পাশাপাশি ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট ভিটামিন বি ১২ এর সঙ্গে খাওয়া উচিত। গর্ভবতী মায়ের খাবারের সময় আপনার পুরো প্লেটে অর্ধেক প্লেট এই ফলমূল থাকা উচিত।
শিশুকে মেধাবী ,সৃজনশীল ও মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে চাইলে আপনাকে খেতে হবে টাটকা শাকসবজি। গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই ভালো এবং সেই শাকসবজি গুলো হতে হবে বিভিন্ন রং এর । এতে করে সালাদ তৈরি করলে সেটা সুস্বাদু দেখতে সুন্দর এবং খেতেও ভালো লাগবে। যা গর্ভবতী মায়ের জন্য খাবারের বেশি অংশ সালাদ থাকতে হবে। যে শস্য দানা গুলো আপনি খাবেন তা থাকতে হবে "হোল গ্রেইন"। হোল গ্রেইন তাকেই বলে যে খাবারগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ নয়। যেমনঃ ওটস, বার্লি, কাওনের চাল, ঢেঁকি ছাটা চাল, লাল আটা। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় আমিষ জাতীয় খাবার রাখতে হবে।মাংস, শিম, বাদাম, মটরশুঁটি , ডিম ও বীজ জাতীয় খাবার।
গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ও খনিজ জাতীয় খাবার
একজন মা যখন গর্ভাবস্থায় ভিটামিন জাতীয় ও খনিজ জাতীয় খাবার খাবে। তখন আপনার সন্তানের খাবারের ফলস্বরূপ হাড় ও দাঁত মজবুত ও শক্তিশালী এবং মেধাবী হবে। আপনার শিশুটি পৃথিবীতে আসবে সুস্থ ও হাসিখুশি নিয়ে। আমাদের শরীরে যখন প্রয়োজনীয় সবগুলো খাদ্য উপাদান অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর জাতীয় খাবার গুলো প্রতিদিনের খাবার তালিকায় থাকবে । তখনই সন্তান গর্ভে ধীরে ধীরে সুস্থ সুন্দর এবং শক্তিশালী হয়ে বড় হবে। মেধা বিকাশে আপনার সন্তানের আয়োডিন খুব গুরুত্বপূর্ণ । আয়োডিন সাধারণত আপনি পেয়ে থাকবেন সামুদ্রিক খাবারে , মাংস , ডিম এবং ডেইরি জাতীয় খাবার।
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় , যেসব খাবারে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আছে সেগুলো গাড়ো সবুজ শাকসবজি, পনির , দুধ ,দই এগুলোতে ক্যালসিয়াম আছে। ক্যালসিয়াম আপনার সন্তানের দাঁত ও হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে । মটরশুটি সিম চর্বি ছাড়া মাংস এসবে পাবেন আপনি আইরন এই আইরন আপনার শরীরে লোহিত রক্তকণিকাকে বাড়তে থাকা সন্তানের অক্সিজেন সরবরাহ করবে। যে সন্তানটি ধীরে ধীরে আপনার শরীরে বড় হচ্ছে সেই সন্তানের বুদ্ধি অর্থাৎ মস্তিষ্ক , মেরুদন্ড বিকাশে কোলিনের গুরুত্ব অপরিসীম। দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় যত খাবার আছে , বাদাম , এই খাবারগুলোতে কোলিন পাওয়া যায়।মিষ্টি আলু ,গাজর ,সবুজ শাকসবজি এ জাতীয় খাবারে ভিটামিন -এ থাকে।
ভিটামিন -এ হাড়ের বেড়ে ওঠা , দৃষ্টি শক্তি তৈরি এবং ত্বক বিকাশের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়।হাড়ের বিকাশের জন্য প্রতিদিন অন্তত ৮৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে। সাইট্রাস জাতীয় ফল লেবু ,কমলা, জাম্বুরা এছাড়াও ব্রকলি , টমেটো ও স্ট্রবেরিতে আছে ভিটামিন সি । সূর্যের আলো এক্সট্রা ভিটামিন ও খনিজ যুক্ত দুধ (ফোরটিফাইড মিল্ক) ,স্যামন ও সার্ডিনের মত যে সব মাছে চর্বি আছে এগুলো আপনাকে প্রতিদিন ৬০০ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট খাবারের মধ্যে দিয়ে ভিটামিন ডি পেতে সহায়তা করে। প্রতিদিন আপনাকে ১.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন " বি ৬" গ্রহণ করতে হবে। ভিটামিন বি৬ শিশুর লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে। তাই গরুর মাংস বা হোল গ্রেইন সিরিল ও কলা ভিটামিন বি৬ জাতীয় খাবার।
ভিটামিন বি ১২ আপনার গর্ভে সন্তানের স্নায়ুতন্ত্র এবং লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। মাছ, মাংস, দুধ ভিটামিন বি ১২ এর উৎস। প্রতিদিন ২.৬ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি ১২ গ্রহণ করা আপনার অবশ্যই প্রয়োজন। শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের জন্মগত ত্রুটি এড়াতে ফলিক এসিডের ভূমিকা অপরিসীম। এটা ভ্রুন ও প্ল্যাসেন্টার বৃদ্ধি ও বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই গর্ভবতী মায়েদের জন্য ফলিক এসিড বেশ কার্যকরী। প্রতিদিন ফলিক এসিড জাতীয় খাবার শাক-সবজি , বাদাম ,কমলা্, লেবুর রস এগুলো ৬০০ মাইক্রোগ্রাম করে কমপক্ষে খাওয়া দরকার।
গর্ভাবস্থায় যে খাবার না খাওয়া উচিত
একজন মা আপনি স্বপ্ন দেখেন আপনার সন্তান মেধাবী হবে ,বুদ্ধিমান হবে। সেই
স্বপ্নকে নয়টি মাস আগলে রাখেন। অপেক্ষা করে্ন সুস্থ, সুন্দর , মেধাবী
শিশুটির জন্য। আর সে সময় পরিবারের সবাইকে হাত বাড়িয়ে দিতে হবে
গর্ভবতী মায়ের ইতিবাচক মনোভাব কে আরো বাড়িয়ে তোলার জন্য। সেই সময় বাড়তি
যত্নেরও প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী মায়ের কোন গর্ভ সংক্রান্ত জটিলতা যেন না
দেখা যায় তার জন্য আপনাকে যে খাবারগুলো না খাওয়া দরকার তাহলোঃ
- মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার।
- কোমল পানীয় ,পাস্তুরাইন ছাড়া দুধ।
- কাঁচা পুরোপুরি রান্না হয়নি এমন মাংস জাতীয় খাবার ।
- সিফুড, কাঁচা মাছ।
- রান্না না করা অঙ্কুরিত বী্জ , সিম বা যেকোনো কাঁচামুলা আলফালফার বীজ, রেডি টুইট সালাদ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এগুলোতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
- কম সিদ্ধ ডিম।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া যে কোন ঔষধ।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সাপ্লিমেন্টারি খাবার ।
গর্ভবতী মায়ের খাবারের পরিচর্যা
একটি সন্তান জন্মের পরেও আপনি নিজের প্রতি যত্নশীল হলে এই খাবারগুলো খেয়েও সন্তানের মেধাবিকাশের ক্ষমতা বাড়তে পারে। আর তখনই মা হিসেবে ঘুমন্ত স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবে পরিণত হবে। কারণ শিশু জন্মের পরে তার কথা বলা, বুদ্ধিমত্তা দেখে বুঝতে পারবেন যে আপনি সঠিকভাবে গর্ভাবস্থায় খাবার গ্রহণ করেছেন। দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাবার অবশ্যই। সে খাবার গুলো পাস্তরিত হবে । পনির , দই এগুলো ডেইরি খাবারের মধ্যে ভালো খাবার। যেহেতু ফ্যাট জাতীয় খাবারের উপাদান অন্য খাবারে পাওয়া যায়। তাই প্রাণীজ ফ্যাট খাওয়া সীমিত করে দিতে হবে ।
বাদাম,মাছ , অ্যাভোকোডো সব খাবারের ফ্যাট অনেক বেশি পাওয়া যায় তাই খাবারের তেলের বিষয়ে একটু সচেতন হলে সুস্থ থাকা যাবে। আর তাই পরিবারের নতুন সদস্যের কল্যাণের জন্য আপনি খাবারে পরিবর্তন আনবেন। যা নিম্নে দেওয়া হলঃ
- প্রথমে খেতে বসার আগে হাতটা ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নেবেন।
- ব্যবহারের আগে এবং পরে যে কোন পাত্র খুব ভালো করে ধুয়ে মুছে রেখে দিবেন।
- মাংস রান্নার সময় পুরোপুরি যেন সিদ্ধ হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
- রান্নার আগে শাক সবজি ,সালাদ, সবজি ,ফলমূল খুব সতর্কতার সাথে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে।
- খাবার খুব যত্নের সাথে সংরক্ষণ করতে হবে।
- রান্নার ঘন্টা-দুয়েকের মধ্যে খাবারটা খেয়ে নিবেন ।
গর্ভাবস্থায় খাবারের পরিমাণ
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় এই নিয়ে গর্ভাবস্থায় মায়ের চিন্তা শেষ হয় না। একজন নতুন মা অর্থাৎ সন্তান সম্ভাবময়ী প্রথম তিন মাস তেমন কোন খাবার
বাড়তি প্রয়োজন হয় না। ধীরে ধীরে অর্থাৎ দ্বিতীয় তিন মাসে প্রতিদিন আপনার কিছু
খাবার বাড়তি দরকার হবে। যার পরিমাণ হলো 340 ক্যালোরি খাবার। আপনার আগের
তিন মাসের চেয়ে বেড়ে যাবে। কারণ আপনার শরীরের ভেতরে আরেকটা ছোট শিশু বড়
হচ্ছে। তার ধীরে ধীরে খাবারের প্রয়োজন বাড়তে থাকছে । তাই নিজের শরীরের এবং
সন্তানের কথা ভেবে খাবারের পরিমাণ প্রতিমাসে একটু একটু করে বাড়াতে থাকতে
হবে।
শেষের তিন মাস গর্ভে একটি শিশু খুব দ্রুত বাড়তে থাকে সেজন্য আপনার প্রতিদিন অতিরিক্ত ৪৫০ ক্যালোরি খাবার বেশি দরকার। কারণ শিশুটি খাবারের প্রয়োজন বেশি পড়ে এজন্য যে শিশুটি বাড়তে থাকছে। মা হিসেবে তখন আপনাকে বেশি পরিমাণে খাবার খেতে হবে অর্থাৎখাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। আপনি একজন মা, সে হিসেবে সন্তানের দায়িত্ব প্রথমে আপনার উপরে বর্তাবে। তাই এই বাড়তি শক্তিগুলো বৃদ্ধি করার জন্য হাতের কাছে কিছু স্বাস্থ্যকর হালকা খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেমনঃবাদাম ,দই ও কিছু সাথে টাটকা ফলমূল। এছাড়া নিজে সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছেন কিনা তা সেবা পাওয়ার জন্য সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে থাকুন ।
গর্ভাবস্থায় সন্তান কোন মাসে কতটুকু বড় হয়
"মা" শব্দটা অনেক আবেগের সাথে জড়িয়ে থাকে। তাই এ সময় মায়ের যত্নটা খুব বেশি নিতে হয়। কারণ বাহ্যিক দিক থেকে গর্ভাবস্থায় মায়ের দেহের একটা পরিবর্তন আসতে থাকে। সন্তানের মস্তিষ্ক বিকাশ মায়ের গর্ভ থেকে শুরু হয়। একটা জাইগোট বা ভ্রণ ধীরে ধীরে মাতৃগর্ভে বেড়ে উঠে। যা অতি ক্ষুদ্র থাকে শুরুতে। সৃষ্টিকর্তার এই নিয়ামত ক্ষুদ্র কণিকাটি ২৮০ দিনের মধ্যে বেড়ে তিন কেজি ওজনের হয় এক মানব শিশু। আপনি মা হচ্ছেন আপনাকে অভিনন্দন।
প্রথম মাসঃ প্রথম মাস পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে ভ্রুণের দৈর্ঘ্য হয় ৩ মিলিমিটার এ সময় শিশুটি্র হৃদ স্পন্দন শুরু হয়ে যায়।
দ্বিতীয় মাসঃ দ্বিতীয় মাস পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে ভ্রুণের দৈর্ঘ্য হয় ২.৫ সেন্টিমিটার ।
তৃতীয় মাসঃ তৃতীয় মাস পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে ভ্রুনের দৈর্ঘ্য হয় ৫ সেন্টিমিটার। এ সময় গর্ভবতী মায়ের জরায়ু হয় একটি কমলালেবুর মত।
চতুর্থ মাসঃ চতুর্থ মাস পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে দেখা যায় পিটাসের ওজন হয় ১২৫ গ্রাম এবং ভ্রুণের দৈর্ঘ্য হয় ১২.৫ সেন্টিমিটার। এই সময় মায়ের গর্ভে শিশুর যৌনাঙ্গ তৈরি হওয়া শুরু হয়।
পঞ্চম মাসঃ পঞ্চম মাস পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে মায়ের পেটে জমে থাকা যে পানি থাকে তার মধ্যে শিশুটি নড়াচড়া করা শুরু করে এবং ধীরে ধীরে মাকে জানাতে শুরু করে আমি আছি। অর্থাৎ পেটের মধ্যে ধাক্কা দিতে শুরু করে। এই সময় মায়ের অন্যরকম অনুভূতিতে থাকে আনন্দদায়ক মুহূর্ত।
ষষ্ঠ মাসঃ এই মাসে চামড়ার নিচে শিশুর ফ্যাট তৈরি হতে শুরু করে এবং শরীরের গঠনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ছোট ছোট লোম তৈরি হয় । এক ধরনের পিচ্ছিল অর্থাৎভারনিস্ক বলে পদার্থ মোমের মত তৈরি হয়। যা শরীরকে ঢেকে রাখে।
সপ্তম মাসঃ এই মাস পূর্ণ হলে শিশু্র হার্ট বিট হয় প্রতি মিনিটে ১৪০ বিট এবং বাচ্চার ওজন হয় ৫০০ গ্রাম।
অষ্টম মাসঃ ধীরে ধীরে আপনার বাচ্চা এখন জরায়ুর নিচের দিকে যেতে শুরু করবে এবং প্রতি সপ্তাহে বাচ্চার ওজন এক থেকে দুই পাউন্ড বাড়বে।
নবম মাসঃ বাচ্চার নড়াচড়া বেশি পরিমাণে বেড়ে যাবে এবং বাচ্চার ওজন এ সময় তিন কিলোগ্রাম বা তার বেশিও হতে পারে।
সন্তান বুদ্ধিমান হতে হলে করনীয়
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় এই চিন্তাটি প্রতিটি বাবা-মায়ের থাকে। প্রতিটি বাবা-মায়ের স্বপ্ন থাকে তার সন্তানটি হবে স্বাস্থ্যকর এবং বুদ্ধিদীপ্ত। মায়ের খাওয়া দাওয়া, চলাফেরা , ইমোশন এর উপর বাচ্চা গর্ভস্থ ভ্রূণে বেড়ে ওঠায় একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। আর তাই হাসিখুশি বুদ্ধিমান ও মেধাবী সন্তান পেতে হলে মা হিসেবে আপনাকে নিজ থেকে দায়িত্ব নিয়ে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। এছাড়াও সন্তানের বুদ্ধিদীপ্ত ,মেধাবী হওয়ার পিছনে উত্তরাধিকার সূত্রে যে জিন আছে তার ভূমিকা অনেকটা কাজ করে। তবে বেশিটা প্রভাব পড়ে আপনার জীবনযাত্রা অর্থাৎ ভ্রুনের বেড়ে ওঠা পরিবেশের উপর।
গর্ভাবস্থায় শিশুর মেধাবিকাশে মায়ের যত্ন
তবে প্রথমে বলে নিতে হয় যে পরিকল্পিত গর্ভধারণ এর কোন বিকল্প নেই। কারণ একজন বাবা-মা হিসেবে যখন পরিকল্পনা করা হয় তার সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসবে তখন তাদের একটা সুন্দর চিন্তা থাকে। অনেক স্বপ্ন থাকে। গর্ভকালীন সুষম খাবার খাওয়া এবং নিয়মিতভাবে ডাক্তারের কাছে পরিচর্যা নেওয়া অর্থাৎ ডাক্তারের পরামর্শে থাকা। ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা ও নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভকালীন মা যদি বেশি পরিমাণ মাছ খেতে পারে সে শিশুর জন্য অনেক ভালো। তাই আপনি মাছ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
তবে আপনি নিয়মিত ভালো খাবার খান এবং মাছ খাওয়ার পরিমাণ যদি বেশি থাকে অর্থাৎ
আপনি মাছ খাওয়ার পরিমাণ বেশি করেন তাহলে আপনার সন্তান এর বোধশক্তি বৃদ্ধি
পাবে এবং ভাষার দক্ষতা ভালো হবে। গর্ভে সন্তান থাকাকালীন মায়ের যদি
ডায়াবেটিস হয় ও মায়ের শরীরের যদি অধিক চর্বি থাকে তাহলে শিশুর স্নায়ু বিকাশ -এ
ক্ষতিগ্রস্ত করে তাই ডায়াবেটিস কে ডাক্তারের শরণাপন্ন থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
ভালো ও হাসিখুশি থাকুন।
শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় তা জেনে ,বাচ্চা প্রসবের পর থেকে বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করেন এবং মা হিসেবে পরবর্তীতে পুষ্টিকর জাতীয় খাবার খান এতে শক্তি বৃদ্ধি হবে এবং বাচ্চা প্রচুর দুধ পাবে। নিয়মিত ওজন পরিমাপ করা, ডায়াবেটিস দেখা, মা প্রতিদিন কি খাচ্ছেন এসব তথ্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জেনে ভাবি মা-এর আমরা সবাই যত্ন নেই তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পাবো অনেক সুস্থ সুন্দর এবং বুদ্ধিদীপ্ত শিশু।
গর্ভাবস্থায় আপনি সন্তানের সাথে কথা বলবেন । এতে সন্তান আপনার অনুভূতি বুঝতে পারে তাকে স্পর্শ করবেন আপনার পেটে হাত বুলিয়ে। হাসি- খুশি ভাবে বেড়ে উঠবে আপনার সন্তান। ভিটামিন জাতীয় সবুজ শাক ও সাথে ফলমূল জাতীয় খাবার নিয়মিত খাবেন এবং ছোট ছোট ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি নিয়মিত করলে আপনার সন্তান সুন্দরভাবে পৃথিবীতে জন্ম নেবে। সুস্থ সন্তান , হাসি-খুশি ভরা মন এ ধরনের সন্তান আমাদের প্রত্যেকের কাম্য।
আপনার মূল্যবান মতামত দেন। এখানে প্রতিটি মতামতের রিভিউ প্রদান করা হয়।
comment url